বাংলাদেশের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের সঙ্গে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের ডিএনএ মিল পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকরা। পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ভারতের সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে দুটি নমুনাই পাঠানো হয়েছিল। সে দুটির ডিএনএ মিলে গেছে।
জানা গেছে, নভেম্বরের শেষ দিকে ডরিন কলকাতায় এসেছিলেন। তখন তার ডিএনএর নমুনা নেওয়া হয়। তারপর দুটি নমুনাই যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছিল।
চিকিৎসার জন্য গত ১২ মে এ রাজ্যে এসেছিলেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের উত্তর ২৪ পরগনার বরানগরের বাড়িতে উঠেছিলেন তিনি। পরের দিন ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছেন বলে বের হয়ে আর ফেরেননি। পরে বন্ধুকে হোয়াটসঅ্যাপ করে জানান, বিশেষ কাজে দিল্লি যাচ্ছেন। তোমাদের ফোন করার দরকার নেই। ১৫ মে ফের বন্ধুকে হোয়াটসঅ্যাপ জানান, আমার সঙ্গে ভিভিআইপিরা আছেন। যোগাযোগ করার দরকার নেই। বাংলাদেশে ব্যক্তিগত সচিবকেও সেটি ফরওয়ার্ড করেন। এরপর থেকে তাকে ফোনে আর পাওয়া যায়নি। ১৭ মে আনারের মেয়ে বাবার বন্ধুকে ফোন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ১৮ মে গোপাল বিশ্বাস বরানগর থানায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্যের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে জানানো হয়। তার খোঁজে শুরু হয় তল্লাশি। পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি তদন্ত ভার নেয়।
কয়েক দিন পর দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় এলাকার বাগজোলা খালে তল্লাশি চালানো হয়। খালের পাড় থেকে উদ্ধার হয় তার খণ্ড খণ্ড হাড়ের টুকরো। পরে নিউ টাউনের সঞ্জিবা গার্ডেনের যে ফ্ল্যাটে তাকে খুন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ, সেখানকার সেপটিক ট্যাংক থেকে কুচো কুচো মাংসের টুকরো উদ্ধার করে সিআইডি। নমুনা পরীক্ষা করে তারা নিশ্চিত হয় উদ্ধার হওয়া মাংস মানুষেরই। ঘটনার তদন্তে নেমে সিআইডি ইতোমধ্যেই সাতজনকে গ্রেফতার করেছে। যদিও মূল অভিযুক্ত আখতারুজ্জামান শাহিন পলাতক। নমুনা নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে আনোয়ারুল আজিম আনারের মেয়ে ডরিনকে ডিএনএর নমুনা দেওয়ার জন্য আসতে বলে। কিন্তু আগস্টে বাংলাদেশে সরকারের পালা বদলের কারণে তার আসা থমকে যায়। নভেম্বরে এসে তিনি নমুনা দেন।
নিখোঁজ ডায়ারির ভিত্তিতে তদন্তে নেমে একটি অ্যাপক্যাবের সন্ধান পেয়ে ছিল পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। সেটিতে করেই আনোয়ারুল আজিম বের হয়েছিলেন। চালককে জেরা করে জানা গেছে, ১৩ মে কৈখালী অঞ্চল থেকে তার গাড়িতে এক মহিলা ও দুই পুরুষ ওঠেন। এরপর গাড়ি যায় নিউ টাউনের সঞ্জিবা গার্ডেন আবাসনে। এরপরই তদন্ত চালাতে ঐ আবাসনে যায় বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। তল্লাশি শুরু হয়। আবাসনের ফুটেজ থেকে জানা যায় ১৩ মে আনোয়ারুল এবং এক মহিলা, দুই পুরুষ সেখানে ঢুকেছিল। পরে পর্যায়ক্রমে একাধিক দিনে তিন জন বেরিয়ে গেলেও আনোয়ারুল বের হননি। সিআইডি সে সময় জানিয়েছিল, আমাদের কাছে ইনপুট আসে বাংলাদেশের সাংসদকে খুন করা হয়েছে।
জানা গেছে, সিসিটিভির ফুটেজে সাংসদের সঙ্গে আসা দুজনকে একটি ট্রলি ব্যাগসহ বের হতে দেখা গেছে। ঐ আবাসনের ফ্ল্যাটটির ভেতরে রক্তের দাগও পাওয়া যায়। সেই রক্তের দাগ বাংলাদেশের সাংসদের কিনা, জানতে ঘটনাস্থল থেকে ফরেনসিক দল নমুনা সংগ্রহ করে। যে গাড়িটি করে তারা ঐ আবাসনে গিয়েছিলেন সেটিও ফরেনসিক করা হয়।
বাংলাস্কুপ/ ডেস্ক/ এনআইএন